হঠাৎ কেন থেমে গিয়েছিল ইন্টারনেটের অনেক বড় সার্ভিস?
হঠাৎ কেন থেমে গিয়েছিল ইন্টারনেটের অনেক বড় সার্ভিস?
ভাই, ধরো তুমি ফোর্টনাইট খেলছো বা জুমে ক্লাসে বসেছো। হঠাৎ দেখলে “কানেকশন ফেল্ড”। প্রথমে রাগটা গিয়া পড়বে তোমার ইন্টারনেট প্রোভাইডারের ওপর। কিন্তু একবার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে বুঝতে পারবে, সমস্যাটা তোমার ইন্টারনেটের নয়। বরং বিশ্বের বড় বড় সার্ভিস এক মুহূর্তে থেমে গেছিল। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল ২০ অক্টোবর, সোমবার।
বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছিল ক্যানভা, স্ন্যাপচ্যাট, ফোর্টনাইট, রোবলক্স, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, প্লেস্টেশন সার্ভার আর অ্যামাজনের কিছু সার্ভিস। হঠাৎ কেন এমন হলো, বুঝতে হলে আগে জানতে হবে সার্ভার আর ক্লাউড সার্ভারের খাটুনি কেমন।
সার্ভার আর ইন্টারনেট – সহজভাবে
সাধারণ মানুষ বলে “ইন্টারনেট চলে সার্ভার দিয়ে”, কিন্তু আসলে সার্ভার মানে কি? ধরো, তুমি কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকছো বা অ্যাপ ব্যবহার করছো। সব তথ্য, ছবি, ভিডিও, ডাটা সব থাকে সার্ভারে। সার্ভার হলো এক ধরণের বড় কম্পিউটার যেটা ২৪/৭ অন থাকে।
সার্ভার দুই ধরণের হয়:
- নিজস্ব সার্ভার: ওয়েবসাইট বা কোম্পানির নিজস্ব সার্ভার।
- ক্লাউড সার্ভার: অন্য কারো বড় সার্ভার ধার করে ব্যবহার করা।
যখন অনেক মানুষ একসঙ্গে কোনো সার্ভিস ব্যবহার করে, নিজস্ব সার্ভার হলে চাপে সার্ভার ক্র্যাশ করতে পারে। যেমন ঘটে SSC বা HSC পরীক্ষার ফলাফল দেখার সময়। কিন্তু ক্লাউড সার্ভার এমন চাপ সামলাতে পারে, কারণ বড় জায়গা থাকে আর প্রয়োজন মতো রিসোর্স দেওয়া যায়।
ক্লাউড সার্ভারের গুরুত্ব
বড় বড় কোম্পানি যেমন ক্যানভা, ফোর্টনাইট, অ্যামাজন – তারা নিজের সার্ভার কম ব্যবহার করে। তারা ক্লাউড সার্ভারের ওপর নির্ভর করে। ক্লাউড মানে হলো বড় সার্ভার যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী জায়গা নাও।
ধরো, Amazon Web Services (AWS) হলো এমন এক ক্লাউড সার্ভার কোম্পানি। তাদের সার্ভারের জায়গা অনেক, আর যখন কোম্পানি তাদের সফটওয়্যার চালায়, তখন শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী জায়গা নেয়। ফলে হঠাৎ চাপ বাড়লেও সার্ভার ক্র্যাশ করে না। কিন্তু যদি AWS-এ কোনো বড় সমস্যা হয়, তাহলে হাজার হাজার ব্যবহারকারী একসাথে সমস্যায় পড়তে পারে।
২০ অক্টোবরের ইন্টারনেট থেমে যাওয়ার কারণ
২০ অক্টোবর যে সমস্যা ঘটেছিল, তা মূলত AWS-এর সার্ভারে। AWS হলো বিশ্বের বড় ক্লাউড সার্ভিস। এই সার্ভারের কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা অনেক সার্ভিসকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ক্যানভা, স্ন্যাপচ্যাট, গেমিং সার্ভার, অ্যামাজন – সবই কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।
তবে এই ধরনের ঘটনা বিরল। আমাদের ইন্টারনেট নির্ভরতা বেড়ে গেছে, তাই হঠাৎ সমস্যা হলে আমরা বেশি সমস্যায় পড়ি।
হ্যাকার নয়, প্রযুক্তিগত সমস্যা
অনেকেই ভাবতে পারে, হঠাৎ সব বন্ধ মানে হ্যাকিং। কিন্তু এই ঘটনায় কোনো হ্যাকিং বা ভাইরাস ছিল না। শুধু সার্ভারের টেকনিক্যাল সমস্যা।
সাধারণ কারণগুলো হতে পারে:
- ওভারলোড – এক সময়ের মধ্যে অনেক ব্যবহারকারী।
- কনফিগারেশন সমস্যা – সার্ভার ঠিকভাবে সেট না থাকা।
- নেটওয়ার্ক বিভ্রাট – ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা।
- হার্ডওয়্যার সমস্যা – সার্ভারের যন্ত্রাংশে ত্রুটি।
ক্লাউড সার্ভারের সুবিধা ও ঝুঁকি
ক্লাউড সার্ভার বড় সুবিধা দেয়: বড় ব্যান্ডউইথ, স্কেলেবল, আর রিমোট থেকে নিয়ন্ত্রণ সহজ। তবে ঝুঁকি আছে – যদি বড় সার্ভারে সমস্যা হয়, লাখ লাখ মানুষ একসাথে সমস্যায় পড়ে। ২০ অক্টোবরও তাই হয়েছিল।
গ্রামের মানুষের চোখে প্রভাব
গ্রামের মানুষের জন্য ইন্টারনেট মানে খবর, যোগাযোগ, অনলাইন ক্লাস বা ভিডিও গেম। হঠাৎ বন্ধ হলে স্কুলের ক্লাস থেমে যায়, মেসেজ যায় না, ভিডিও দেখার মজা নষ্ট হয়। তবে এই সমস্যা আমাদের শিখায়, প্রযুক্তির ওপর আমরা বেশি নির্ভরশীল হয়ে গেছি। ব্যাকআপ নিলে সমস্যা কম হয়।
ভবিষ্যতেও কি ঘটতে পারে?
বিশ্বের বড় সার্ভারগুলো AI ব্যবহার করে আগেই সমস্যা ধরার চেষ্টা করে। তবে কোনো প্রযুক্তি ১০০% নিরাপদ নয়। তাই ভবিষ্যতেও হঠাৎ ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার ঘটনা হতে পারে।
আমরা কি করব? গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ক্লাউডে রাখার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যাকআপ রাখা। যেমন, স্কুলের কাজ ল্যাপটপে সংরক্ষণ করা, গেম ডাটা অফলাইনে রাখা।
শেষ কথা
২০ অক্টোবরের ঘটনা আমাদের শেখায়, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, ব্যাকআপ ও সতর্কতা রাখা জরুরি। গ্রাম-গঞ্জ থেকে শহরের মানুষ সবাই কিছু সময় সমস্যার মুখোমুখি হয়। ছোট সার্ভারও ক্র্যাশ করে, বড় ক্লাউড সার্ভারের সমস্যা বিরল হলেও প্রভাব বেশি।
সুতরাং, হঠাৎ ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার মূল কারণ ছিল বড় ক্লাউড সার্ভারের টেকনিক্যাল সমস্যা। আমাদের প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকলে, এমন মুহূর্তে সমস্যার প্রভাব কমিয়ে আনা যায়।
